রানা ইসলাম,বদরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি: রোপা আমন মৌসুমের ধানগাছ ইঁদুরে কেটে নষ্ট করছে। কৃষকরা ইঁদুর নিধনে বিভিন্ন ফাঁদ পাতলেও ইদুর দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইদুর তাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।
রংপুরের বদরগঞ্জে আগাম জাতের কিছু ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছে চাষিরা। এখনও অনেক ধানগাছের শীষ বেরোতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় ধানের গাছ ইঁদুরে কেটে সাবাড় করছে। ফলে ইদুরের তাড়ানো নিয়ে ধান চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছে।
বুধবার উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ঘুরে কথা হয় রামনাথপুর এলাকার ধান চাষি মোস্তাফিজার রহমান
সাথে তিনি বলেন, জমির সাথেই বাঁশ ঝার রাতের অন্ধকারে ইদুর জমিতে নেমে এসে ধানের গাছ কাটা শুরু করে। কীটনাশক মেশানো ঔষধও মানছে না ইদুর। রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। প্রায় জমিতেই ইদুর ধান কাটছে। জমিতে বিষপ্রয়োগ করেও ইদুর দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।
শংকুরপুর চেমটাপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, আমার ধানের গাছের শীষ বাহির হবে বড় বড় (সোছা) বা ইদুর গাছের মাঝখানে কেটে দেয়। এ রোগের কোনো ঔষধ খুঁজে পাচ্ছি না। ধানের আবাদ নিয়ে বড় চিন্তায় আছি। ইদুর মারা ফাঁদ এবং কীটনাশক দিয়েও কোনো ফয়দা মিলছে না।
মধুপুর ইউনিয়ন কচুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর মজিদ বলেন, ধান চাষের মৌসুমের শুরুতেই জমিতে সেচের পানি দিয়ে আগেভাগেই ধানের চাষ করেছি অনেক টাকা খরচ। আশা করি ফলন ভালোই পাব কিন্তু ইদুর ধানের গাছ কেটে সাবাড় করছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও ইঁদুর আমাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে। বেশির ভাগ এলাকায় ধানের জমিতে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে গেছে। দলবদ্ধ ইঁদুর ধান খেতের মাঝে গিয়ে থোড় আসা ধান কেটে ফেলছে। ইঁদুর নিধনে নানা ধরনের ফাঁদ পাতলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
দামোদরপুর ইউনিয়ন ঝাড়পাড়া গ্রামে আব্দুল রাজ্জাক বলেন, আমি গুটিসর্ণা ধান রোপণ করেছি। ধানের শীষ গাছের ভিতর রয়েছে (সোছা) বা ইদুর গাছের কাচ থোড় কেটে ফেলছে। আমি (সোছা) বা ইদুর মারার জন্য বাঁশের তৈরি ফাদ বানিয়ে সেখানে খাদ্য দিয়ে জমিতে ফেলিয়ে রাখি। সেই ফাঁদে অনেক ইদুর মারা যায় তার পরেও ইদুর কমে না।
বিশেষ করে ধানের গাছের শীষ আসার সাথে সাথেই ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি (সোছা) বা ইদুর মারছি তারপরও এদের কোনোভাবে কমানো যাচ্ছে না।
লোহানীপাড়ার মাঠেরহাট আনিছুর রহমান বলেন, আমার ১২ শতক জমির ধান থোড় আসা অবস্থায় অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। জমির আইলে বা উঁচু কোথাও ইঁদুরের গর্ত নেই। এদের থাকার কোনো যায়গাও খুঁজে পাওয় যায় না,নতার পরেও জমির মাঝখানে এসে ধানের গাছ কাটে। ইঁদুর ধান গাছের নরম অংশ কেটে দিয়ে আবাদি জমির ধানের গাছ ফাঁকা করে দিয়েছে । জমির ৪ ভাগের ১ ভাগ ধানের গাছ কেটে সাবাড় করেছে । রাতের বেলায় জমির চারপাশে ঢাকঢোল পিটিয়েও এদেরকে দমন করা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: সেলিনা আফরোজা বলেন, এবার উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৯হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন মৌসুমের ধানের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা হয়েছে।উপজেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ধরনের খবর পেয়েছি। প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে কৃষকদের ইঁদুর মারার পদ্ধতি দেখিয়ে দিচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে ইদুর মারতে বাঁশের ফাঁদ ব্যবহারে করা হচ্ছে আর এটি যান্ত্রিক পদ্ধতি। আর এধরণের অনেক যান্ত্রিক ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে ধানের জমিতে। যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিদিন অনেক ইদুর মারছে চাষিরা।