Headline :
ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া সংগ্রামী ঐক্য জোটের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করায় রূপসায় জিএম কামরুল এর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল ও পথসভা হয়েছে  হেলিকপ্টারে এসে উড়াল দিয়ে নিয়ে গেলেন বদরগঞ্জের কন্যাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ফকিরের মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন ডুমুরিয়ার চুকনগরে  মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগ ক্ষতি ৫ লাক্ষাধীক সমাজ সেবাই বিশেষ অবদান রাখায় মানবাধিকার সম্মাননা পেলেন। আলহাজ্ব শাহাজাহান জমাদ্দার  নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন সভাপতি মুজিবর-সম্পাদক মফিজুর রহমান রংপুরের বদরগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যা রূপসায় এসএসসি ও এইচএসসি’র কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ আসছে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ, বাড়বে শীতের তীব্রতা
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমেছে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের

Reporter Name / ৯৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

রুহুল আমিন রুকু,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে বন্যায় ঝুপড়িতে পানিবন্দি রূপবানুর গৃহবন্দি জীবন বাড়ির পাশে গবাদিপশু রাখার মাটির ঢিবি। ঢিবির ওপর মাচান করে সেখানে পাতানো হয়েছে খাট। ওপরে জিও ব্যাগ আর পলিথিন দিয়ে তৈরি চালা। চতুর্দিকে পলিথিনে ঘেরা। এভাবেই তৈরি ঝুপড়িতে খাটের ওপর বসে আছেন রূপবানু (৪৫)। খাটের পাশে বাঁশের মাচায় চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ তৈজসপত্র। গত প্রায় এক মাস ধরে এই ঝুপড়িতেই রূপবানুর সংসার। চারদিকে পানি কিন্তু রূপবানুর খাবারের পানি সীমিত। শুধু পানি নয়, খাদ্যসংকটে রূপবানু ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পারেন না। ফেসবুক লিংক দেখুন https://www.facebook.com/profile.php?id=61561797107011&mibextid=ZbWKwL

রূপবানুর বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মশালের চর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত হাছেন মণ্ডলের স্ত্রী তিনি। চলতি বন্যায় পানিবন্দি রূপবানু গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অভাব তার নিত্যসঙ্গী।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে পশ্চিম মশালের চর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় রূপবানুর বসতবাড়ির ঘরে এখনও হাঁটুপানি। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনে ঝুপড়িতে বসে উঁকি দিচ্ছিলেন রূপবানু। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলেন খাদ্যসহায়তার নৌকা কিনা। ঝুপড়ির একেবারে কাছে নৌকা ভিড়িয়ে রূপবানুর কাছে জীবনযাপন নিয়ে জানতে চাই। জবাবে যা জানালেন তা শিউরে ওঠার মতো।

রূপবানু বললেন, ‘আমাদের খুব অসুবিধা। এক মাস থাইকা এই মাচানে আছি। বাইরে যাইতে পারি না। খাওয়াদাওয়ার অভাব, ট্যাকাপয়সার অভাব। ধার কইরা চলতাছি। বাড়িতে টিউবওয়েল তলায় গেছে। শান্তি মতো পানিও খাইতে পারি না। ইউটিউব লিংক দেখুন https://www.youtube.com/@ebnews24

বন্যায় সহায়তা পাওয়া প্রশ্নে প্রান্তিক এই নারী বলেন, ‘বানের শুরুতে খালি আধা সের চিড়া আর আধা সের মুড়ি দিছে। আর কিছু পাই নাই।’

পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন রূপবানুর বাড়ির ঠিক পূর্বে তার প্রতিবেশী আছির উদ্দিনের বাড়ি। আঙিনায় থাকা বন্যার পানিতে হাঁস সাঁতার কাটছে। বন্যার পানির স্রোতে হেলে যাওয়া একটি ঘর বাঁশ আর গাছের গুঁড়ি দিয়ে কোনোমতে দাঁড় করিয়ে রাখা। বাকি ঘরটিতে এখনও হাঁটুপানি। বললেন, ‘একবার আধা সের মুড়ি আর আধা সের চিড়া ছাড়া কোনও সাহায্য পাই নাই।’

পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটছে, এমন প্রশ্নে আছির উদ্দিন বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র এবার খুব ক্ষয়ক্ষতি কইরা গেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। এলাকায় কাজ-কামাই নাই। যাগো কাছে কাজে যামু তাগো বাড়িতেই পানি। জমা টাকা শ্যাষ কইরা অহন ধারে চলতাছি।’

রূপবানু আর আছির উদ্দিনের মতো একই অভাব-অভিযোগ ওই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আশরাফুল ও গৃহবধূ রোবেকা খাতুনের কথাতেও। তাদের বসতভিটাতেও পানি। কষ্ট আর ভোগান্তির গল্পটা সবার একই। বন্যার পানি কমলেও অভাব তাদের বিড়ম্বনা আর ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

নৌকাযোগে গ্রামটি ত্যাগ করার সময় দূর থেকে আরও একটি ভেঙে পড়া ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়ে। কাছে গিয়ে জানা গেলো ঘরটি মৎস্যজীবী এরশাদের। বন্যায় পানির স্রোতে সেটি ভেঙে পড়েছে। উঁচু ঢিবির ওপর গবাদিপশু রেখে আরেকটি ঘরে বাঁশের খুঁটির ওপর উঁচু করে খাট পেতেছেন এরশাদ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তাতেই বসবাস। সোমবার ঘর থেকে পানি সরে গেলেও আঙিনা থেকে সরেনি।

এরশাদের স্ত্রী হাসিনা বলেন, ‘রান্নার কষ্ট, খাবারের কষ্ট, খাওয়ার পানির কষ্ট। ঘর পইড়া গেছে। ট্যাহার অভাবে ঠিকমতো খাওন জোগাড় করাই কষ্ট হইয়া গেছে। নদীত মাছও ধরা পড়ে না। কোনও সাহায্য নাই।’

বন্যা ভোগান্তির সঙ্গে খাবারের অভাবে দুর্ভোগ চরমে,ব্রহ্মপুত্রের জনবসতিপূর্ণ চরগুলোতে এখন অভাব আর ভোগান্তির গল্প। পানি নামতে শুরু করলেও বানভাসিদের ভোগান্তি কমেনি। চারপাশে পানি, কাদা। সবচেয়ে বেশি সংকট কাজের। কাজের সংকটে চরে চরে অভাব। রোজগার না থাকায় নিম্ন আয়ের দিনমজুর পরিবারগুলো চলছে ধারদেনার ওপর। এর মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের বাড়তি খরচের জোগানের চিন্তা তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, পুনর্বাসন সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে, অনেকের পক্ষে অসম্ভব। যাত্রাপুর ঘাটে নৌকা থেকে নামার পরপরই শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। সে সময় রূপবানু আর তার প্রতিবেশীদের ভোগান্তি চোখে ভাসছিল।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতিকুর রহমান বলেন, ‘পশ্চিম মশালের চর গ্রামে আমি নিজে গিয়ে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেছি। সহায়তা পাওয়ার যোগ্য কোনও পরিবার না পেয়ে থাকলে তালিকা যাচাই করে তাদের দেওয়া হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলায় সব নদ-নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান বন্যায় জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষদের জন্য ৬০৯ মেট্রিক টন চাল ও ২৬ হাজার ২৭০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category