রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রাজিবপুর নৌপথে আবারও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাহেদ খান ডাকাতির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটের কাছে দুটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতদল হামলা চালায়। নৌকাগুলো রাজিবপুরের কোদালকাটি ও পাখিউড়া থেকে চিলমারীর উদ্দেশ্যে আসছিল। মাঝপথে যাত্রী তোলার জন্য কড়াইবরিশাল খেয়াঘাটে থামলে, সেখানেই সশস্ত্র ডাকাতদল আক্রমণ চালায়।
ডাকাতরা গুলি ছুড়ে যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লুট করে নেয়। যাত্রীদের চিৎকারে স্থানীয়রা ডাকাতদের ধাওয়া করলেও তারা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা নৌ-পুলিশের কয়েকজন সদস্য কিছুই করেননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রী ও স্থানীয়রা।
নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, “খেয়াঘাটে গরু ব্যবসায়ীদের নৌকা ছিল। ডাকাতরা তাদের নৌকায় হামলার পর আমার নৌকাতেও লুটপাট চালায়। ১০-১৫ জন ডাকাত ছিল। দুই নৌকা থেকে টাকা লুট করে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। আমরা কিছুই করতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “ডাকাতরা গুলি ছুড়েছে, তাদের হাতে অস্ত্রও ছিল। আমার কাছে তিন যাত্রীর ৫৭ হাজার টাকা ছিল, ডাকাতরা আমাকে আঘাত করে সেই টাকা নিয়ে গেছে। আরও কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকেও টাকা লুট করেছে। গরু ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। অনেকে আতঙ্কে পানিতে লাফিয়ে পড়েন। কিন্তু পাশেই পোশাক পরা তিনজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি।”
কড়াইবরিশাল এলাকার বাসিন্দা আজম মিয়া জানান, “গুলির শব্দ ও যাত্রীদের চিৎকারে ঘাটের কাছে থাকা স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। তারা নৌকা নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করলেও ততক্ষণে তারা পালিয়ে যায়। ঘাটে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।”
ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “ডাকাতরা গরু ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা লুট করেছে। আমরা ধাওয়া করলেও পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। তারা অন্তত ফাঁকা গুলি করলেও ডাকাতদের ধরা যেত।”
চিলমারী থানার ওসি মোশাহেদ খান বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। বিস্তারিত জেনে তারপর বলতে পারব।”
ডাকাতির ঘটনায় চিলমারী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম সরকারকে ফোন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি কড়াইবরিশাল এলাকার পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদের একই এলাকায় একটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারও আগে, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কাছে ‘দুইশ’ বিঘার চরের’ কাছে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে ১৬-১৭ জনের একটি ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয়।
নৌপথে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ব্রহ্মপুত্র নৌপথ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।