ডুমুরিয়া(খুলনা):দশক দুয়েক আগেও খুলনা ডুমুরিয়ার বিস্তির্ণ এলাকায় চাষ হতো শুধুমাত্র সোনালি ধান। তবে নদীখাল ভরাট হওয়ার ফলে জলবদ্ধতার কারণে গেলো দশক থেকে এসব বিলে ভেঁড়িবাঁধ দিয়ে শুরু করে মৎস্য চাষ।মৎস্য চাষের পাশাপাশি ভেঁড়িবাঁধে বারোমাসি বিভিন্ন সবজিসহ অফসিজন তরমুজ চাষ করে কৃষি অর্থনীতিতে আমুল পরিবর্তন এনেছে এ উপজেলার কৃষকরা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামের তরুণ কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল নিজের চাষকৃত জমি না থাকায়, কয়েকবছর ধরে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি শুকনা মৌসুমে সোনালি ধান চাষ করছেন এছাড়াও ঘেরের আইলে চাষ করছেন বিভিন্ন রকম বারোমাসি সবজিসহ অফসিজন তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন তিনি। এবছর তার নিজস্ব ৪০শতক জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল।তার দেখাদেখি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা এ পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষাবাদ করে বাড়তি আয় করছেন।
কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল আমাদের প্রতিনিধিকে জানান এবছর ঘেরের পাড়ে অফসিজন তরমুজের ফলন হয়েছে তুলনামূলক অনান্য বছর থেকে প্রায় দেড়গুণ।
ইতিমধ্যে তরমুজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে, একই সাথে ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসছে এসমস্ত অফসিজন তরমুজ কিনতে।এতে করে বাড়তি খরচ ছাড়া লাভও হবে বেশ।আগামীতে বৃহৎ পরিসরে অফসিজন তরমুজ চাষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
একই এলাকার কৃষাণী মিতালী রাণী মন্ডল বলেন আমারা বিগত চার পাঁচ বছর যাবৎ এ অফসিজন তরমুজ চাষ করে আসছি বিগত বছরগুলোতে ভাল ফলন না হলেও এবছর ডুমুরিয়া কৃষি অফিসের পরামর্শে আস্থা জাতের তরমুজ চাষ করে ফলন পেয়েছি বেশ।অনান্য বছরগুলোতে পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করলেও এবছর জমি হারি বা লিজ নিয়ে ৪০ শতাংশ মৎস্য ঘেরের আইলে এ তরমুজ চাষ করেছি।ইতিমধ্যে দুইবার হারবেস্ট করেছি আরও একবার হারবেস্ট করতে পারবো।কেমন খরচ হয়েছে ও লাভ কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সব মিলিয়ে ৩০হাজার টাকা খরচ হলেও দুইবার হারবেস্ট করে (১) লক্ষ (১৫) হাজার টাকা বিক্রি করেছি আর শেষবার হারবেস্টে সম্ভবত আরো(২০ বা ৩০) হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো।সবমিলিয়ে অনান্য বছরের তুলনায় এবছর লাভের পরিমাণ বেশি হবে। আগামীতে বিঘা তিনেক জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করার ইচ্ছাও পোষণ করেন তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা
কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন গত দু-দশক আগেও একটিমাত্র ফসল উঠতো এ অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে। কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে বিগত কয়েক বছরে মাছের ঘেরের আইলে বারোমাসি সবজিসহ অফসিজন তরমুজ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। অফসিজন তরমুজ লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় ডুমুরিয়ার লবণাক্ত এলাকায় ব্যাপক ভাবে চাষ করছে কৃষকরা।অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২৪ সালে উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেন কৃষকেরা। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় (৩০ ) হেক্টর জমিতে এ তরমুজ চাষ হয়েছে।
গত মৌসুমে ( ২শত ৭৫ ) হেক্টর জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ হয়েছিলো।ফলন ও বিক্রয় ভালো হওয়ায় বর্তমান মৌসুমে প্রায় ( ৩শত ৫) হেক্টর জমিতে এ অফসিজন তরমুজ করা হয়েছে। বিগত মৌসুমের লক্ষমাত্রার চেয়ে এমৌসুমে ( ৩০ ) হেক্টর জমিতে বেশি চাষ করা হয়েছে এ অফসিজন তরমুজ ।
খুলনা বিভাগীয় সিনিয়র মনিটরিং অফিসার
কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন অফসিজন তরমুজ উচ্চমুল্যের ফসল হওয়ায় স্বল্প সময়ে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পায়।আমারা কৃষক পর্যায়ে মাঠে যেয়ে প্রদর্শনী, প্রশিক্ষন ও মনিটরিং করে থাকি। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ এবং পোকামাকড়ের সমস্যা নিযে উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা সরাসরি মাঠে এসে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে আসছে।অফসিজন তরমুজ ৩৩শাতাংশ ঘেরের ভেঁড়িতে চাষ করতে খরচ হয় মাত্র ২৫থেকে ৩০ হাজার টাকা। জিবনকাল (৯০) দিন হওয়ায় অল্প জমিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে সব খরচ বাদেও অন্যান্য ফসলের তুলনায় কমপক্ষে ছয় গুণ লাভ হবে।
উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় অধিক লাভের আশায় ডুমুরিয়া উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা
অফসিজন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত অফসিজন তরমুজ বাজারে চড়া মুল্যে বিক্রয় কর লাভবান হতে পারবে।