শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়মের অভিযোগ
আহসান হাবীব,(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্রে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী রোগীর আশ্রয়স্থল। তবে, এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়ম ও দূর্নীতির। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে দালালদের দৌরাত্ম্যের। যেনো রোগীর স্বজনদের পড়তে হয় মহাবিপাকে ও খরচের খাতায় গুনতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তারগণ নিয়মিত রোগীদের সেবা না দিয়ে বাইরে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। যারা থাকছেন, তারাও আবার সপ্তাহে মাত্র তিনদিন কর্মস্থলে আসে এবং বাকী তিনদিন না এসেই হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতির স্বাক্ষর করেন। রোগীদের ঔষধ দেয়ার ক্ষেত্রে শুধু কয়েক ধরনের ঔষধ দিয়ে বিদায় করে দেন কর্তৃপক্ষ। দিচ্ছে না কোন ভাল মানের ঔষধ। শুধু প্যারাসিটামল, হিসটাসিন, ডক্সিসাইক্লিন মেট্রোনিডাজল, অমিপ্রাজল সহ ৬/৭ধরনের ঔষধ। দেয়া হচ্ছে না ভাল মানের কোন এন্টিবায়োটিক। জরুরী বিভাগে চিকিাৎসাশেষে প্রেসক্রিপশন রোগীর লোকজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন বাইরের দোকান থেকে ঔষদ কেনে আনেন।
স্বাস্থ্য্য কমপ্লেক্স এলাকায় সরজমিনে ঘুরে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে সকল রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরণের ঔষধ দেয়া হচ্ছে। সে মোতাবেক স্টোর রুম থেকে ঔষধ দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপেক্সের গেট থেকে একেবারে বারান্দা পর্যন্ত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজন্টেটিভ সারিবদ্ধভাবে ডাক্তারদের দেয়া ব্যবস্থাপত্রের ফটোকপি করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে দালালদের দৌরাত্ম্যের।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন দালাল রোগী ধরা নিয়ে ব্যস্ত। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছর। হাসপাতালের চারপাশের গড়ে উঠা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির মালিকরা এসব দালালকে নিয়মিত দেখভাল করেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, ‘রোগী ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন পাই এসব দালাল। দালালদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করতে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের বকসিশ বা উপঢৌকন। যেসব বিভাগে রোগী বেশি, অস্ত্রোপচারের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, সেসব রোগী দালালদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা জানান, দালালরা প্রথমে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দেন। পরে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা বলে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নানা ধরনের সুযোগ দেয়া প্রতিশ্রুতি সহ বিভিন্ন ধরনের কৌশলে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া, নির্ধারিত ফার্মেসীতে ঔষধ কেনার জন্য ব্যবস্থাপত্র পাঠানো হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ও তার স্বজনর প্রবেশ করলেই মুখোমুখি হতে হয় দালালের। রোগীর মন জয় করতে রয়েছে নারী দালালও। যে সমস্ত ক্লিনিকের নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও অচল ও পরীক্ষা –নিরীক্ষা দূর্বল সে সমস্ত ক্লিনিকও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাছাড়া স্বাস্থ্য কমক্লেক্সের মধ্যে সাম্প্রতিককালে চুরি সহ কয়েকটি ঘটনা ঘটায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে আবাসিক এলকায় থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরর অস্বস্তির মাঝে আছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. কামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি বছরে ৫৭ লাখ টাকা মূল্যের ৩৭ ধরনের ঔষধ বগুড়ার ঠনঠনিয়া থেকে আমদানী করা হতো। কিন্তু ৫ আগস্ট্রে পর মাত্র ২৩ ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঔষধ দেয়ার ও ইনজেকশন দেয়ার নিয়ম আছে এবং দেয়া হয়। জরুরী বিভাগেও বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক, ব্যাথা ও গ্যাসের ঔষধ দেয়ার নিয়ম আছে। আউটডোরে ডোরে রোগীদের সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় শতভাগ ঔষধ সরবরাহ দেয়া সম্ভব না হওয়ায় কিছুটা কম দেয়া হয়।
দালালদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, শিবগঞ্জ পাঁচটি ক্লিনিক সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও বৈধ কাগজ পত্র আছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে আশেপাশের ১৭ ক্লিনিকের কোন বৈধ কাগজপত্র ও সরকারী অনুমোদন নেই। তাদের রোগী ধরার মূল টার্গেট হলো সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র ও হাসপাতাল। তাই তারা রোগী ধরার জন্য দালাল নিযুক্ত করে। তবে আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আরো কমানোর জন্য বা শতভাগ দ্ালাল নির্মুল কর্ াচেষ্টা অব্যহত আছে।
তিনি আরো শিবগঞ্জ উপজেলাটি বড় হওয়ায় প্রতিটি ঔষধ কোম্পানীর ৪জন করে প্রতিনিধি আছে। তারা ডাক্তারদের অনারিয়াম দেয়ার মাধ্যমে নিজ নিজ কোম্পানীর ঔষধ প্রেসক্রিপশনের লেখিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এটা অনারিয়াম লেনদেন বন্ধ না হলে কোম্পানীর লোকজনের ভীড় বন্ধ না হওয়ার সম্ভবনাই বেশী। তবে আগে সপ্তাহে প্রতিদিনই কোম্পানীর লোকজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভীড় করতো। এখন শুধু রবিরর ও বুধবার প্রবেশ করতে পারবে।
তবে, ভিতরের মসজিদের আশেপাশেই থাকতে হবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বপালন কালে কোন ডাক্তার বাইরে কোন ক্লিনিকে বা চেম্বারে রোগী দেখতে পারবে না। তবে কোন ডাক্তার বিকাল আড়াইটার পরে বাইরে রোগী দেখতে পারবেন।