রানা ইসলাম,বদরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি: রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সহ পৌরসভার ড্রেন উপর নতুন দোকান বসিয়ে দোকান বসিয়ে দখল করে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুই হাট বারে পৌর শহরের রাস্তার দুপাশ দখল করে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীরা ও বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।
স্থানীয় কয়েকজন পথচারীর ও চালকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, পৌর শহরের ভিতরে সড়কে নতুন করে অনেক ড্রেনেজ ব্যবস্থা হয়েছে। ড্রেনের উপরের স্লাব ও দেওয়া হয়েছে। সেই স্লাবের উপর ব্যবসায়ীরা দখল করে ব্যবসা করছেন। সড়কের যানজট হলে ওই স্লাবের উপর দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সামনে হওয়ায় দখল করে তাদের পণ্যগুলো বসিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যবসায়ীরা ড্রেনের উপরেই পাকা করন করে তাদের ব্যবসার স্থাপনা বসিয়েছেন।যানবাহন যাওয়া আসা সময় জনগন ফুটপাত দখল দেখে রাস্তা দিয়ে হাঁটে এতে আমাদের সমস্যা হয়।এঘটনাগুলো উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি।
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাট বদরগঞ্জ।সোমবার ও বৃহস্পতিবার থানা রোড হতে শহীদ মিনার রোডে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে সড়কের জায়গার ওপর বসেন। এতে এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৪০ টি হাটবাজার রয়েছে। রংপুর থেকে বদরগঞ্জ পার্বতীপুর চলে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বদরগঞ্জ। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। শহীদ মিনার থেকে হাসপাতাল রোড, শহীদ মিনার থেকে উপজেলা রোড, শহীদ মিনার থেকে বদরগঞ্জ মেলার মাঠ, এ সড়ক দিয়ে কয়েকশ রিকশা-ভ্যান, মিনিবাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে দুই উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া এই সড়ক দিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হাটের কাছের ৭ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা–যাওয়া করে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বদরগঞ্জ হাটের দুই পাশে সড়কের ওপর, ধান, বীজ, পোশাক, সবজিসহ নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে সড়কের ওই অংশ যেন হাটে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।এনামুল হক নামে এক ব্যাক্তি বলেন, মিতা সিনেমা সামনের পথ দিয়ে হাঁটার সময় মনে হয় ঢাকা শহরের ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছি।আমাদের নিজেদের সদিচ্ছা বড়ই অভাব।তাই সড়কের এমন অবস্থা।
অপরদিকে ধান হাটি রোডে বীজের চারা ব্যবসায়ীরা রাস্তার মধ্যেই বীজ বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলে রাস্তার মধ্যে বীজ বিক্রি করছেন কেন ব্যবসায়ীরা বলেন আমাদের নির্দিষ্ট কোন জায়গা না দেওয়ায় পূর্ব থেকেই এই জায়গায় বীজ বিক্রি করে আসছি তাই এখানে বীজ বিক্রি করি।
বদরগঞ্জের মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের যখন সকালে কলেজে যাই তখন খুব ভীড় থাকে।আবার যখন কলেজ ছুটি হয় তখনই একই অবস্থা।
ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কোন অবস্থা নেই। সব ফুটপাত দখল চলে গেছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের।
বদরগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন স্কুল খোলা থাকে, তখন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়। বিশেষ করে সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন। স্কুলের গেট পর্যন্ত রিকশা-ভ্যান নিয়ে যাওয়া যায় না। হেঁটে ঠেলাঠেলি করে অতি কষ্টে যাতায়াত করতে হয়।
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কয়েক লাখ টাকার হাট এখন ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর হাট কমিটির এক সদস্য। , তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছা করে সড়কে দোকান নিয়ে বসছেন। তাদের সড়কে ওপর থেকে উঠে যেতে বললেও তাঁরা শোনেন না। উল্টাপাল্টা কথা বলে।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সারওয়ার জাহান মানিককের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।বদরগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক শামিম মিয়া বলেন, চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় কলেজে যাওয়া আসার সময়। বিগত সরকার আমলে সাবেক মেয়র টুটুল চৌধুরী ইচ্ছে থাকলেও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারেনি।
বদরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, হাট বারে এমন অবস্থা তৈরি হয় যে দুই মিনিটের পথ ১ ঘন্টাও অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও পৌরসভার পক্ষ হতে যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলো দখল করে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ড্রেনের উপরে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। দোকান না বসালে মানুষ ড্রেনের উপর স্লাব দিয়ে চলাচল করতে পারত।
বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবতী বলেন,বিগত সরকারের আমলে জনপ্রতিনিধিরা শুধু নিজেদের আখের গোছা ও লুটপাট নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।তারা জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেনি।তিনি আরো বলেন আগামী মাসের আইন-শৃঙ্খলা মিটিং এ ফুটপাত দখল নিয়ে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।
বদরগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত নুরুল আমিন বলেন,ধানহাটির ঐ সড়কটিতে সবসময় অসম্ভব ভীড় ও ফুটপাত দখল করে যত্রতত্র মালামাল রাখায় আমাদের যাওয়া আসায় বেগ পেতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন,জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে ফুটপাত দখল করে যারা ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।