মনিরামপুর(যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরের সাবেক এমপি ইয়াকুব আলী, সাবেক এসপি ও বর্তমানে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, মনিরামপুর থানার তৎকালীন ওসিসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মনিরামপুর পৌরসভার তাহেরপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী ইউসুফ দফাদারকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে তার মা রেবেকা বেগম বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন। বিচারক মামলাটি আইজিপিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
রোববার (২৬ আগস্ট) যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে এ আবেদন করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন মনিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি মোল্যা খবির আহমেদ, এসআই শহিন, এসআই হিরন্ময়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহামুদুল হাসান, আগরহাটি গ্রামের কামরুজ্জামান কামিয়ার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন।
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ, বাপ্পি ঘোষ, পৌর কাউন্সিলর আদম আলী, দত্তকোনা গ্রামের কাজী মাহমুদ পারভেজ, কামালপুর গ্রামের মহিতোষ ঠাকুর, দুর্গাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন, হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মাহাবুর রহমান, রতনদিয়া গ্রামের লতিফ শেখ, গরিবপুর গ্রামের হারুন অর রশিদ সেলিম ও মোবারকপুর গ্রামের ইমরান খানা পান্না।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মনিরামপুর তাহেরপুর গ্রামের ইউসুফ দফাদার বিএনপির কর্মী ছিলেন। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইউসুফ ও দুর্গাপুর গ্রামের লিটন মোটরসাইকেলযোগে মনিরামপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে মনিরামপুর ডিগ্রি কলেজ মোড়ে ট্রাকে আগুন দেখে তারা পার্শ্ববর্তী জালঝাড়া বৌ-বাজারে গিয়ে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের ধরে পুলিশে সংবাদ দেয়। তৎকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশে মনিরামপুর থানার ওসি ও দুই এসআই বৌ-বাজারে এসে ইউসুফ ও লিটনকে ধরে নিয়ে যায়। ইউসুফ ও লিটনের আটকের সংবাদ পেয়ে স্বজনেরা থানায় গিয়ে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ওসি মোল্যা খবির আহম্মেদের সঙ্গে দেখা করেন।
মোল্যা খবির আহম্মেদ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। স্বজনরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করলে তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে বলে জানিয়ে দেয়।
রাতের মধ্যে টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে পরদিন সকালে থানায় গিয়ে স্বজনেরা জানতে পারেন ইউসুফ ও লিটনকে যশোর নিয়ে গেছে। স্বজনেরা দ্রুত যশোর এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে ইউসুফ ও লিটনকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তাদের মরদেহের সন্ধান পান।
পুলিশ জানায়, তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। খোঁজ নিয়ে ওই দুজনের স্বজনেরা জানাতে পারে ইউসুফ ও লিটনকে মনিরামপুরের বেগারিতলার ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে হওয়ায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে ইউসুফের মা রেবেকা বেগম এ হত্যা মামলা করেছেন।