রিয়াদ ইসলাম,রংপুর,প্রতিনিধি: রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড়স্ত সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে সেন্ট্রাল হসপিটালে চিকিৎসাধীন মুশফিকুর রহমান ওরফে রাসেল (৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত হয়েছে। গত (১৭আগস্ট ২০২৪ ) শনিবার বিকেল সোয়া ৪টায় অপারেশনের পর রাত ১১ টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে।
মৃত রাসেল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ছোট মির্জাপুর গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে।
স্বজনদের অভিযোগ পায়ের এতো ছোট অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর জন্য সরকারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের রেসপন্সিবিলিটি না থাকাকেই দায়ি করেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল – ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর বিভাগীয় ও জেলা শাখার সভাপতি ডা. অধ্যাপক মামুনুর রহমান। এঘটনায় এক সপ্তাহ পর আজ ২৪ শেখ আগষ্ট নিহত রাসেলের পরিবারের লোকজন সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এসে সমবেত হয়ে অপরাধিদের বিচারের দাবি জানান।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৪ আগষ্ট সড়ক দুর্ঘটনায় বিকেলে পায়ে গুরুতর আঘাত পান মুশফিকুর ওরফে রাসেল । রাতেই রংপুর নগরীর গুডহেলথ হসপিটালে অর্থোপেডিকস ডাক্তার শফিকুল ইসলামকে দেখানোর পর অপারেশন করার পরামর্শ দেন । পরে নিহিত পরিবারের পূর্বপরিচিত এনেসথেসিয়া ডা. সদরুল ইসলাম সেলিম।
১৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রংপুর নগরীর মেডিকেলমোরস্থ আশা হসপিটালে ভর্তি করান। ভর্তি করার পর পরিবারের সদস্যরা জনতে পারেন, অপারেশনের জন্য যে সিআরএম মেশিন থাকা দরকার সেটি আশা হসপিটালে নেই।
পরে এনেসথেসিয়া ডা. সদরুল ইসলাম সেলিম রোগীর পরিবারের সদস্যদেরকে বলেন, তাকে সেন্ট্রাল হসপিটালে অপারেশন করতে হবে। ডাক্তার সদরুল ইসলাম সেলিম শনিবার দুপুর ১:৩০ টার দিকে আশা হসপিটাল থেকে রোগী রাসেল কে সেন্ট্রাল হসপিটালে অপারেশনের জন্য ভর্তি করান। অপারেশন করার জন্য রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের করান ডা. সদরুল ইসলাম সেলিম ।
নিহত রাসেলের পরিবারের সাথে এনেস্থেসিয়া ডা. সদরুল ইসলাম সেলিমের পূর্ব পরিচিত থাকায় তার প্রতি অঘাত বিশ্বাস ছিলো বলে জানান নিহত রাসেলের বড় ছেলে রাফি সহ পরিবারের সদস্যরা। সেই বিশ্বাসে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে দিয়ে অপারেশন করালে ভালো হবে সে দায়িত্বও দেওয়া ছিলো ডা. সদরুল ইসলাম সেলিমকে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে ডা. সদরুল ইসলাম সেলিম রমেক হাসপালের অর্থপেডিক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. এ.বি. এম মোর্শেদ গনিকে দিয়ে অপারেশন করান।
বিকেল সাড়ে ৪ টার অপারেশন হলে রাত ১১টায় তার মৃত্যু হয়।
এমন মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্য সহ সজনরা, নিহতের বড় ছেলে রাফি বলেন,অপারেশনের পর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হসপিটাল ও রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল হসপিটালে নিতে চাইলেও আমাদেরকে তা করতে দেয়নি সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। এত ছোট অপারেশনে আমার বাবার মৃত্যু হবে হবে কখনো ভাবি নি । এমন অপারেশনে কারো মৃত্যু হয় আমি কখনো শুনিনি। আমার বাবার মৃত্যু ভুল চিকিৎসায় হয়েছে আমি এর বিচার চাই। একই কথা বলেন, নিহিত রাসেলের ছোট ছেলে সাকিব ওরফে রুদ্র।
এদিকে এমন মৃত্যুর জন্য চিকিৎসা পেশাটাকে ব্যবসায়ী দৃষ্টিভঙ্গিতে নেওয়া ও প্রাইভেট হসপিটালে রোগীদের প্রতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রেসপন্সিবিলিটি না থাকায় এরকম মৃত্যু হাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল – ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর বিভাগীয় ও জেলা শাখার সভাপতি ডা. অধ্যাপক মামুনুর রহমান।
তিনি বলেন, একজন চিকিৎসকের প্রাইভেট হসপিটালে যেরকম রোগীদের প্রতি দায়িত্ব থাকা দরকার, তারা সেটা করেন না। সরকারি হাসপাতালে চাকরি করার পরেও অতি মুনাফার জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট হসপিটালে তারা দৌড়ঝাপ করে থাকেন। যার কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটছে।
এমন মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এনেস্থিসিয়া ডা. সদরুল ইসলাম সেলিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
একই বিষয় নিয়ে রংপুর মেডিকেলের অর্থোপেডিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ.বি.এম মোর্শেদ গনির সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল হলেও রিসিভ করেননি বা পরবর্তী সময়ে কল ব্যাক করেননি তিনি ।
রংপুরের প্রাইভেট হসপিটাল ক্লিনি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বলের কারণে নানা সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, মৃত্যু অবধারিত, কিন্তু কারো দায়িত্ব অবহেলার কারণে সেটি হচ্ছে কি-না সিটি দেখা দরকার।