Headline :
ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া সংগ্রামী ঐক্য জোটের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করায় রূপসায় জিএম কামরুল এর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল ও পথসভা হয়েছে  হেলিকপ্টারে এসে উড়াল দিয়ে নিয়ে গেলেন বদরগঞ্জের কন্যাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ফকিরের মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন ডুমুরিয়ার চুকনগরে  মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগ ক্ষতি ৫ লাক্ষাধীক সমাজ সেবাই বিশেষ অবদান রাখায় মানবাধিকার সম্মাননা পেলেন। আলহাজ্ব শাহাজাহান জমাদ্দার  নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন সভাপতি মুজিবর-সম্পাদক মফিজুর রহমান রংপুরের বদরগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যা রূপসায় এসএসসি ও এইচএসসি’র কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ আসছে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ, বাড়বে শীতের তীব্রতা
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাটে পানিবন্দি ২৫ হাজার পরিবার

Reporter Name / ৪৭ Time View
Update : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রংপুর,প্রতিনিধি: উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটে সৃষ্ঠ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে শনিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তি অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বামতীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে এর সংখ্যা। আতংকিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমে উৎপত্তিস্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই ভাবে শুস্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারত তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়। এই উজানের ঢল ও ভাড়ি বর্ষনে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে। টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। এতে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা বাড়ার সাথে পানিও বেড়ে যায়। রাতভর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্বক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। শনিবার রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ এর ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতংকিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার সাগর মিয়া বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রিজ অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় বাঁধ কাঁপছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

একই গ্রামের আব্দুর রশিদ ছোট বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে হাঁটু পানি। বাচ্চা বৃদ্ধদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে পড়েছি। শুকনো খাবার প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত আসেনি। এবারের বন্যায় তেমন কেউ খবর নিতেও আসেনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বিছনদই গ্রামের তমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামে আড়াই/তিন শত পরিবারের বসবাস। সবাই শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্দি। দিন যত যাচ্ছে পানিবন্দির সংখ্যা তত বাড়ছে। বন্যার সময় শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে বড় বিপদে পড়তে হয়। বন্যা হলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তিস্তাপাড়ের মানুষদের। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তার মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন/সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সাথে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয়। সেটা নজরদারী করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিস্তা নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category