রুবেল আহমদ,সিলেট,প্রতিনিধি: বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসক সিলেট কর্তৃক আয়োজিত ১৫ ব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩১ আগস্ট, শনিবার বেরা ১১ টায় সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বৃক্ষরোপনে বিশেষ অবদান রাখায় নার্সারি কেটাগরিতে, নার্সারি উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন সিলেটের সুগন্ধা নার্সারীর স্বত্বাধিকারী মনোয়ারা বেগম।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সুবর্ণা সরকার এর সভাপতিত্বে বৃক্ষ রোপন অভিযান ও বৃক্ষ মেলা-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী, এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট রেঞ্জ ডিআইজ, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার মাহবুব রহমান, সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ,
বক্তব্য রাখেন বৃক্ষপ্রেমিক সাংবাদিক-কলামিষ্ট আফতাব চৌধুরী, বৃক্ষপ্রেমিক জামিল আনসারী।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পর মনোয়ারা বেগম তার অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, সরকার আমাকে নার্সারি উদ্যোগতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার দিয়েছে আমি মনে করি এই পুরস্কার আমার কর্মের দক্ষতার ফসল। আমাকে জাতীয় পুরস্কার দিয়ে সরকার আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বলেন, আমি ছিলাম গৃহিনি, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে স্বামীর ব্যবসায় খোঁজ খবর নেই, স্বামীর সাথে পরামর্শ করে নার্সারিতে সহযোগিতা করি, এক পর্যায় আমি হয়ে উঠি নার্সারী উদ্যোক্তা।
জানা যায়, বাড়ির উঠানে ছিল স্বল্প পরিসরে নার্সারি। হাজার খানিক চারা ছিলো উঠানে, ২০১০ সালে মনোয়রা বেগম নার্সারির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাড়ির উঠানের ডিঙ্গি পেড়িয়ে ৭/ ৮ বছরের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ৩টি নার্সারী গড়ে তোলেন, হাজারো প্রজাতির লক্ষাধিক ফলজ, বনজ, ঔষধি, শুভাবর্ধনকারি, বিলুপ্ত প্রায় বৃক্ষ, উন্নত মানের সঠিক জাতের চারা কলম রয়েছে সুগন্ধা নার্সারিতে। নার্সারি উন্নতির পাশাপাশি সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আসে। তার ২ সন্তান কে সিলেটের সুনামধন্য স্কুলে লেখা পড়া করান।
দীর্ঘ ১৩ বছরে মনোয়ারা বেগম এর ২০ থেকে ২৫ শতক জায়গার নার্সারির পরিধি বেড়ে এখন ১৩ বিঘা জমির ওপর তিনটি নার্সারি তৈরি করেছেন। তার নার্সারিতে ১৫টি পরিবারের ১৯জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে বৃক্ষরোপণে অসামান্য অবদান রাখায় পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।
সিলেট সুগন্ধা নার্সারিতে রয়েছে, আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পোয়ারা, মালটা, কমলা, নারকেল, সুপারিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় হাজারো প্রজাতির লক্ষাধিক চারা করম আছে। আছে ননি ফল, কসল, বাসক, তুলশি, কাঁটা মুকুটসহ প্রায় ৭০ প্রজাতির ওষুধি গাছ। দুধরাজ, হাড়জোরা মৌচুছি, বুতিজাম খইপাতা, আগড়, স্বর্ণ চাপাসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় গাছের চারা রয়েছে সুগন্ধা নার্সারিতে । সব মিলিয়ে প্রায় দেড় থেকে ২ লক্ষ চারা কলম মজুদ আছে মনোয়ারা বেগমের সুগন্ধা নার্সারিতে।
২০১০ সাল থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলায় প্রথম ও ২য় স্থান ধরে রেখেছেন। ২০২৩ সালে বৃক্ষরোপণে অসামান্য অবদান রাখায় জাতীয় পুরস্কার-২০২৪ লাভ করেছেন তিনি। তার এ প্রাপ্তিকে কাজে লাগিয়ে আর্থ সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে চান মনোয়ার বেগম।
মনোযারা বেগম এর নার্সারির কর্মচারী ছাফারু, শামিম, দেলোয়ার, ইমরান, সুদিব দে, বলেন, তারা ১৩/১৪ বছর ধরে এখানে কাজ করেন এখানকার উপার্জিত টাকা দিয়েই সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনা চলে। পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করেন।’ ছাফারুরন বেগম, বিজু বেগম, ছফেদা বেগম, বেগম নামের নারী শ্রমিকরা বলেন, ৭ বছর ধরে কাজ করি। যা পাই ভালোই চলে, সংসার চালাই, সন্তানদের লেখাপড়া করাইতে পারি। কাজের চাপও কম।’ দেলওয়ার হোসেন বলেন, স্ত্রীর পাশাপাশি আমিও স্বাবলম্বী। আমাদের নার্সারিতে ভালো মানের সঠিক জাতের চারা কলম রয়েছে, মানুষের চাহিদাও বেশি। বৃক্ষ প্রেমিকগণ আসেন, গাছ কেনেন। সব মিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে।’
সুগন্ধা নার্সারি সকল স্টাফরা বলেন আমরা বিভিন্ন প্রজাতির চারা কলম প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করছি। আমাদের সুগন্ধা নার্সারি সত্তাধারী কারি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। এ পুরস্কার আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।